দীর্ঘ ১৭ বছর পার হলেও চালু করা যায়নি বরিশালের একমাত্র সুইমিং পুল। উপরন্তু সরকারি উদ্যোগে তৈরি এই পুল অযত্ন-অবহেলায় বেহাল হয়ে পড়েছে। খোয়া যাচ্ছে পুলের মালামাল।
বরিশাল নগরের চাঁদমারীস্থ শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামের উত্তরপাশে ১৯৯৭ সালে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুল নির্মাণের দরপত্র আহবান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। একই সালের ১ জুন শুরু হয় নির্মাণকাজ। কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০০০ সালের ১১ এপ্রিল সুইমিং পুলটি উদ্বোধন করা হয়।
তবে শুরু থেকেই নির্মাণকাজে নিম্নমান ও নিয়ম না মানার অভিযোগ ছিলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন হক অ্যান্ড সন্সের বিরুদ্ধে। পুলটির কূপ ঢালাইয়ের সময় স্টিলের পাত ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা দেয়া হয় কাঠ দিয়ে। ফলে ঢালাইয়ের মালামাল ভালোভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় কূপে প্রথম পানি ওঠানোর পরই তাতে ফাটল দেখা দেয়। যে ফাটল দিয়ে পানি চুইয়ে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ফাটল মেরামতে আট লাখ টাকা এবং আধুনিকায়নে আরো অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সমস্যা থেকেই যায়। এসব মেরামতের মধ্যে পুলে লাগানো হয় টাইলস, আর পানির জন্য স্থাপন করা হয় দুটি পাম্প। কিন্তু কোনোভাবেই ৪ লাখ ৩২ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতার কূপটিতে পানি আটকানো সম্ভব না হওয়ায় এ অবধি প্রতিযোগিতা আয়োজনও সম্ভব হয়নি।
এদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ২৫ লাখ টাকায় বসানো পানির পাম্প দুটিও কোন কাজে আসেনি পুলের। তাই শুরু থেকেই গচ্চার কারণে এটির পেছনে এখন আর অর্থ ব্যয় করেত রাজি নন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে সুইমিং পুলটি একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। রং চটা, পলেস্তারা খসা ইট-বালুর দেয়াল আর জং পড়া লোহার সরঞ্জাম দেখলে মনে হয় বহু বছরের পুরনো কোনো স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে পুরাতন টিনের বেড়া দেয়া। পাশাপাশি পুলের কূপের টাইলস্ ময়লা-আবজর্না, আর ফাটলে নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির আহমেদ জানান, সুইমিং পুলটি নষ্ট থাকায় সাঁতারের অনুশীলনে ভাটা পড়লেও সন্ধ্যার পরে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারপার্সন ফিরোজ মোস্তফা বলেন, সুইমিং পুল থাকলে নির্ধারিত নিয়মে প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে শহরের শিশুরা নিরাপদে সাঁতার শিখতে পারতো। সুইমিং পুলের কারণে সাঁতারুর অনুশীলনও কমে গেছে অনেকটাই। আবার পুলের অভাবে সরকারি, বেসরকারিভাবে সাঁতারের নানা আয়োজন হচ্ছে পুকুরে।
বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল আলম বলেন, সুইমিংপুলটির বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আর ব্যবহারের যেমন উপযোগী নেই, তেমনি সংস্কার করলেও কাজে আসবে বলে মনে হয় না। আবার ভেঙে ফেলতে হলে বিধান অনুযায়ী স্থাপনার বয়স ও একটি নির্ধারিত সময় পার করতে হবে। তাই পুরো বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখা হয়েছে। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply